২০১৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর সিলেটী বইপোকা গ্রুপের সাথে ঘুরে এসেছিলাম সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওর থেকে। এই পোস্টে আপনাদের সাথে সেই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতিগুলো শেয়ার করবো। সিলেটী বইপোকা একটি ফেসবুক ভিত্তিক গ্রুপ। যেখানে সিলেটের বইপ্রেমী ছেলেমেয়েরা নিয়মিত অনলাইনে আড্ডা দেয়। মাঝে মাঝে অফলাইনেও সিলেটের বিভিন্ন যায়গায় মিলিত হয়ে চা, নাস্তা খাওয়ার পাশাপাশি আড্ডা দেয়। এই আড্ডাকে তারা নাম দিয়েছে চাড্ডা (চা+আড্ডা)! ২০১৬-১৭ সালের দিকে আমি এই গ্রুপের এডমিন ছিলাম। তো এই গ্রুপ থেকেই ২০১৭ সালে ডিসেম্বরে হঠাৎ পরিকল্পনা করা হলো টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণের। আমি শুনামাত্রই রাজি হয়ে গেলাম। সিলেটী বইপোকা গ্রুপের মূল এডমিন সাখাওয়াত হোসেন শাকিল সব আয়োজন করে রেখেছিলেন। তার পরিকল্পনা অনুযায়ী ডিসেম্বরের ২৯ তারিখ শুক্রবার সকাল বেলা আমরা একটা বাস রিজার্ভ করে মোট ২৬ জন বইপোকা সিলেট থেকে রওনা হলাম টাঙ্গুয়ার হাওরের উদ্দেশ্যে। আমার ছোট বোন রুমানাও ছিলো এই গ্রুপের একজন সদস্য। তাকেও সাথে নিয়ে গেলাম।
জুম্মার নামাজের পূর্বেই আমরা তাহিরপুরে পৌছালাম। নদীর পাড়ে জুম্মার নামাজ আদায় করে আমরা আগে থেকে ঠিক করে রাখা নৌকায় চড়লাম। নৌকায় উঠার কিছুক্ষণ পরেই দুপুরের খাওয়া দাওয়া সম্পন্ন হলো। আমরা কয়েকজন বসে ছিলাম নৌকার ছাদে। ছাদ থেকে নদীর দু’ধারের দৃশ্য দেখতে অসাধারণ লাগছিলো। নদীপথ দিয়ে চলতে চলতে বেশ কিছুক্ষণ পর আমাদের নৌকা টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রবেশ করলো। হাওরের স্বচ্ছ পানিতে নীল আকাশের প্রতিচ্ছবি পড়ায় পুরো হাওরের পানি নীল দেখাচ্ছিলো। শীতকালে হাওরে পানি কম থাকার কারণে পানিগুলো পরিষ্কার ও স্বচ্ছ ছিলো। হাওরের মাঝামাঝি একটা যায়গায় যাওয়ার পর চোখে পড়লো অনেকগুলো গাছের সারি। গাছগুলোর শিকড় পানিতে ডুবে আছে। শুধু গাছগুলোই দেখা যাচ্ছিলো। নীল হাওরের মাঝখানে এরকম একটি দৃশ্য যে কী রকম ভালো লেগেছিলো তা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এই যায়গায় আমার রেকর্ড করা একটি ভিডিও ক্লিপ: Tanguar Haor, Tahirpur, Sunamgonj, Bangladesh
![]() |
টাঙ্গুয়ার হাওরে আমি |
শেষ
বিকেলে আমরা পৌছালাম আমাদের মূল গন্তব্যে। একটা যায়গায় অনেকটা স্থলভূমি। সেখানে গিয়ে
কিছুটা দূরে হাওরের পানিতে অতিথি পাখির দেখাও
পাওয়া গেলো। অনেক গাছ-গাছালি দিয়ে ভরা একটা চমৎকার প্রাকৃতিক পরিবেশ ছিলো সেটা। চা
নাস্তা করার জন্য কিছু অস্থায়ী দোকানপাটও ছিলো। সেখানে উঁচু একটা ওয়াচ টাওয়ার রয়েছে।
টাওয়ারটিতে উঠে আমরা সবাই ছবি তুললাম। টাওয়ারের উপর থেকে পুরো টাঙ্গুয়ার হাওরের একটা
অন্য রকম ভিউ পাওয়া যায়। টাওয়ার থেকে নেমে আমরা শুনলাম হাওর পাড়ের শিশুদের কন্ঠে অসাধারণ কিছু গান। গানের দৃশ্যটি ধারণ করেছিলাম এই ভিডিওতে: টাঙ্গুয়ার হাওর পাড়ের শিশুদের গান
বিকেলটা
ওখানে কাটিয়ে আমরা আবার নৌকায় উঠলাম ফিরে আসার উদ্দেশ্যে। আসার পথে আমার জন্য আরো
চমক অপেক্ষা করছিলো। সন্ধ্যাবেলা হাওরের পানিতে চাঁদের আলো পড়ে এক অনন্য অসাধারণ
প্রাকৃতিক দৃশ্যের অবতারনা করেছিলো। আর এই দৃশ্য দেখতে দেখতে আমরা সকল বইপোকা নৌকার
ছাদে বসে গল্প করছিলাম। আজ সাড়ে পাঁচ বছর পরেও সেই সময়ের কথা মনে পড়লে আমার মাঝে একটা
বিশেষ ভালো লাগার অনুভূতি কাজ করে। সারা জীবন
মনে রাখার মতো একটা সময় কেটেছিলো এই টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণে।
এশার নামাজের সময় আমরা আবার তাহিরপুরের নৌকা ঘাটে এসে নামলাম। তারপর বাসে করে চলে এলাম সিলেটে। পেছনে রেখে এলাম টাঙ্গুয়ার হাওর ভ্রমণের সুখ স্মৃতি।